"Dhaka Attack" - বাংলা সিনেমার এক নতুন মাইলফলক এর সূচনা
লেখকঃ AI Imon
২০১২ সালে গল্প লেখা শুরু আর ২০১৭ সালে মুক্তি - ৫ বছরের পরিশ্রম একটি মাত্র ছবির জন্য । যেখানে ৫ বছরে আমাদের বাংলা ছবির পরিচালকেরা ১০ টা ছবি বানিয়ে ফেলেন । কিন্তু সেখানে দীপঙ্কর দীপন একটি চলচিত্র বানাতেই ৫ বছর লাগিয়ে দিলেন ,তার মানে এই ছবি অন্য সব ৫-১০ টা ছবির মতো হবে নাহ সেটা আগেই বুঝে গিয়েছিলাম । টিজার ,ট্রেইলার দেখে বুঝে গেলাম দারুন কিছু আসছে । তাই প্রথম দিনেই ছবিটা দেখা থেকে নিজেকে আটকাতে পারি নি ।একটু শুরু থেকে বিস্তারিত বলি -
৬ই অক্টোবর শুক্রবার ছবিটি সারা দেশব্যাপি ১২২ টি হলে মুক্তি পায় ঢাকা এটাক ।কিন্তু ঢাকা এটাক মুক্তির সাথে সাথে যেনো প্রকৃতি ও আমাদের ওপর এটাক করে বসলো । অসহ্য গরম আর সূর্যের তীব্র তাপদাহে ঘর থেকে যেনো বেড়োনো দায় ।কিন্তু তারপর প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে বেড়িয়ে পরলাম সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলের উদ্দেশ্য । ৬ টা ইয় শো তাই ৫ টার দিকে পৌছে গেলাম হলের সামনে ।গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ । এই গরমে এত মানুষ ! সিনেমা হলের সামনে তীল ধারনের জায়গা নেই ।আমি অনেক বছর যাবত নন্দিতা তে সিনেমা দেখি কিন্তু এত ভীড় আমি কখনো দেখি নি ইভেন ঈদে ও না ।টিকেট এর জন্য হলের সামনের রাস্তা পর্যন্ত ৪ টা লাইন ।অনেক কষ্টে টিকেট নিয়ে ঢূকে পরলাম হলের ভিতরে ।হলের ভিতর প্রবেশ করতেই আমার আফ্রিকা মহাদেশের গরমের ফিল পেলাম ।ছবি শুরু হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে যারা এসেছে তারা কাউন্টারে টিকেট পায় নি ,একজনকে জিজ্ঞেস করতে বললো ব্ল্যাকে ৪৫ টাকার টিকেট ১৫০ টাকা দিয়ে কিনে এসেছে ।ছবি শুরুর আগ মুহুর্তে একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখি ডিসি তে তীল ধারনের জায়গা টুকু ও নেই । সিট না পেয়ে অসংখ্য মানুষ ফ্লোরে বসে আছে আর গরমের কারনে সবাই শার্ট খুলে বসে গেছে । হাফ টাইমের হলের সবাই ঘামে একপ্রকার গোসল করে ফেলেছে ।কেউ কেউ শার্ট-প্যান্ট খুলে শুধু হাফ প্যান্ট পরে বসে ছবি দেখছে ।একটি বাংলা ছবির এত ক্রেজ ভাবতেই অবাক লাগে ।কি এমন আছে এই ছবিতে ?? তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ...
ঢাকা তে একসাথে অনেক গুলো খুন হচ্ছে এবং একটি স্কুল বাসে বোম্ব ব্লাস্ট হয় ।একের পর এক খুন আর বোমা হামলায় দেশের জনগন দিশেহারা এবং প্রশাসন প্রশ্নের মুখে ।পুলিশের দুইটি টিম বোম্ব স্কোয়াড এবং সোয়াট এর কয়েকজন অফিসারকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় ।শুরু হয় তদন্ত , কখনো ঢাকায় তো আবার কখনো চিটাগাঙ্গে আবার কখনো বান্দরবনে ।কে বা কারা আছে এইসব এর পিছে ,চাইছেই বা কি ? পুলিশ কি পারে ঢাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রান বাচিয়ে সে মাস্টারমাইন্ডকে ধরতে ? এইসব জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে ঢাকা এটাক । বোম্ব স্কোয়াডের লিডে আছেন আরেফিন শুভ এবং সোয়াট এর লিডে আছেন এবিএম সুমন ।তাদের সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ এবং আফজাল হোসেন । মাহিয়া মাহির চরিত্রটা একজন সাংবাদিক ।শুভ র সাথে মাহির রসায়ন টা ঠিক ততটুকো ই দেখানো হয়েছে যতটুকো রোমান্স একটি কপ থ্রীলার ফিল্মে দেখানো উচিত ।এ বিএম সুমনের স্ত্রীর চরিত্রে নওসাবা মোটামোটি ভালোই করেছেন ।ক্যামিও চরিত্রে আছেন আলমগীর স্যার এবং শিপন মিত্র ।
প্রথমেই আসি ছবির গল্পে ।ছবির গল্প আহামারি পেছানো কিছু না ।একটি সিম্পল স্টোরি কিন্তু তার ব্যাতিক্রম উপস্থাপন ।যেভাবে ডিরেক্টর গল্পটাকে প্রজেন্ট করেছেন তার জন্য ডিরেক্টর প্রশংসার দাবিদার ।একটি সিম্পল গল্পকে টূইস্ট-টার্ন ,থ্রীল ,একশন ,ইমোশন ,হালকা রোমান্স ,দেশপ্রেম ইত্যাদি দিয়ে যেভাবে প্রজেন্ট করা হয়েছে তাতে দর্শক এক সেকেন্ড পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবে না ।গল্পটাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেনো মাস এবং ক্লাস দুইশ্রেনীর দর্শকের এই ছবি ভালো লাগে। এরজন্য গল্পকার ,চিত্রনাট্যকার ,ডায়লগ রাইটার অবশ্যই বাহবা পাওয়ার যোগ্য ।
এবার আসি আর্টিস্টদের অভিনয়ের দিকে । প্রথমেই আরেফিন শুভর কথা বলতে হয় ।ছেলেটা দিন দিন নিজেকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাচ্ছে । যারা বলেন আরেফিন শুভ অভারএক্টিং করে তারা প্লিজ হলে গিয়ে ছবিটা দেখে আসবেন ।ছবি দেখার পর শুভ কে নিয়ে আপনার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না । শুভকে দেখে একবার ও মনে হয়নি সে পুলিশ এর অভিনয় করছে ।তার কথাবার্তা ,হাটাচলা ,ফিগার ,বন্দুক ধরা ,চোখের চাহনী থেকে শুরু করে চুলের কাট কিংবা গোফ রাখা পর্যন্ত সবকিছু একদম পারফেক্ট ।যেনো একজন বাস্তবিক পুলিশ অফিসার ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্দায় ।হাসপাতালের দৃশ্যে বোম্ব ডিফিউজ করার পর শুভ র চোখের চাহনী আর মুখের এক্সপ্রশন আপনার শরীরের লোম খাড়া করে দেবে গ্যারান্টি । সারা ছবিতে এমনকি গানের দৃশ্যে ও ছবির সেইম লুক যা সচরাচর বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না । আমাদের দেশের নায়কদের ছবির এক দৃশ্য লম্বা চুল থাকে তো পরের দৃশ্যে চুল ছোট । ছবিতে দাড়ি ছাড়া আবার গানের মধ্যে দাড়িসহ ।তবে শুভ এরকম করেন নি ,ছবির জন্য নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন ।একটি ছবির জন্য তার এই ডেডীকেশন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার । এরজন্য শুভ পাবেন ১০ এ ৯ ।
মাহিয়া মাহি সাংবাদিক চরিত্রে মানিয়ে গেছেন ।মাহি এর আগে ও অনেকবার সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাই এই চরিত্র টি তার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে গেছে ।ছবিতে অনেক কিউট লেগেছে থাকে তবে টুপ টাপ গানের মধ্যে মাহিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো ।শেষের দিকে ইমোশনাল সিনে একটু অভার এক্টিং না করলে শুভর মতো তিনি ও ফুল মার্ক পেতেন । মাহি পাবেন ১০ এ ৭।
সোয়াট এর অফিসারের রোলে এ বি এম সুমন পার্ফেক্ট ছিলেন ।তার ফিজিক্স লেভেল ,কথাবার্তা ,হাঠাচলা ,এক্সপ্রেশন দেখে তাকে ও সত্যিকারের পুলিশ মনে হয়েছে ।তার চেহারা আর ফিগার মাশাল্লাহ ,এরকম পুলিশ অফিসার বাস্তবে হলে সব সুন্দরী মেয়েরা আসামী হয়ে যাবে ।বাই দা ওয়ে অভিনয়ে আরো উন্নতি করতে পারলে তার ফিউচার ব্রাইট । সুমন পাবেন ১০ এ ৭.৫ ।
একজন সোয়াট অফিসারের প্রগনেন্ট স্ত্রীর চরিত্রে কাজী নওসাবা ভালো ই ছিলেন ।তবে তার চরিত্র অনুযায়ি তাকে স্ক্রীন টাইম বেশি দেওয়া হয়ছে । টান টান উত্তেজনার মধ্যে বারবার প্রেগনেন্ট মহিলাকে দেখানো একটু বোর করে দর্শকদের । নওসাবা পাবেন ১০ এ ৬ ।
এই মিশনের হেড হিসেবে শতাব্দী ওয়াদুদ দারুন করেছেন ।তার কথাবার্তা ,এক্সপ্রেশন গুলো দারুন ছিলো ।কখনো টেনশনে থাকার এক্সপ্রেশন আবার কখনো রাগান্বিত এক্সপ্রেশন ।সকিছুই নিখুত ভাবে করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ ।তিনি পাবেন ১০ এ ৯ ।
সবশেষে Last But Not The Least তাসকিন রহমান ।ঢাকা এটাক এর স্টার পারফর্মার । তার পারফরমেন্স এককথায় বলবো আউটস্টেন্ডিং ।অনেক দিন পর বাংলা চলচিত্র একজন স্টাইলিস্ট ভিলেন পেলো । কি এক্সপ্রেশন ,কি ডায়লগ ডেলিভারী ,কি লুক জাস্ট ওয়াও ।ডিরেক্টর সাহেব কে সংখ্য ধন্যবাদ এরকম একজন ট্যালেন্ট কে হাইলাইটস করার জন্য ।চিৎকার চেচামেচি আর কুত্তার বাচ্চা ,শুয়োরের বাচ্চা না বলে শুধু অভিনয় আর এক্সপ্রেশন দিয়ে যে কতটা ভয়ানক ভিলেনিজম দেখানো যায় তা তাসকীন রহমান দেখিয়ে দিলেন ।ছেলেটাকে যদি ডিরেক্টর রা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সে অনেক দূর যাবে ।তার এই ক্যারেক্টার কে অনেক দিন মনে রাখবে মানুষ । বাজিমাত করে দিয়েছে এই ছবিতেই ।তিনি পাবেন ১০ এ ৯ ।
আর বাকি যারা আছেন ছোট ছোট ক্যারেক্টারে তারা সবাই ভালো করেছেন ।আলমগীর স্যার এবং শীপন এর ক্যামিও চরিত্র ও অনেক ভালো হয়েছে ।সবার কাছ থেকে তাদের সেরাটা বের করে নিয়েছেন ডিরেক্টর সাহেব ।
ছবির মিউজিক ভালো ছিলো ।টুপ টাপ ভালো ছিলো আরো ভালো হতে পারতো যেহেতু অরিজিৎ সিং কে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছেন ।তবে দর্শকের সবচেয়ে পছন্দের গান টিকাটুলি ।এই গানের নতুন ভার্সন প্লাস দারুন ভিডিও তে হলের সবাই নাচবে। কারন মাস অডিয়েন্সের এই ধরনের ফান সং দারুন লাগে ।স্কুলের বাচ্চাদের জন্য একটি গান ছিলো এবং শেষের দিকে একটি রোমান্টিক স্যাড সং ছিলো যা অনেক ভালো ছিলো । তবে সবচেয়ে ভালো ছিলো এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ।বাংলা ছবিতে এধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর আগে কখনো হয়েছে বলে আমার মনে হয় নি ।থ্রীলার সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট ।প্রতিটা সিনকে আরো সুন্দর করে তুলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ।এরকম ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর জন্য টিমকে সাধুবাদ ।
এবার আসি সিনেমাট্রোগ্রাফি তে ।আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি বাংলা ছবিতে এরকম সিনেমাট্রোগ্রাফি এর আগে কখনো হয় নি ।ক্যামেরা কাজ ছিলো দেখার মতো ।৫ জন সিনেমাট্রোগ্রাফার কাজ করেছেন এই ছবিতে ।বান্দরবন অংশে ,বিদেশের অংশে কিংবা গাড়ির রেসিং এ ক্যামেরার কাজ ছিলো জাস্ট ওয়াও ।দেখেই মনে হয়েছে প্রতিটা সিনকে অনেক যত্ন করে সময় নিয়ে ধারন করা হয়েছে ।এত বড় পরিসরে ক্যামেরা ওয়ার্ক এর জন্য টিমকে সাধুবাদ জানাই ।
ভি এফ এক্স এর কাজ অনেক ভালো ছিলো ।সচরাচর বাংলা ছবির ভি এফ এক্স থেকে অনেক উন্নত ।এখানে ভি এফ এক্স টিমকে এবং ডিরেক্টর কে ধন্যবাদ জানাই তারা ব্লাস্টের সিন গুলোকে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য ।ভি এফ এক্স কিন্তু খুব বেশি দামি কিংবা হাইফাই ছিলো না তারপরেও ডিরেক্টর এর বুদ্ধিমত্তার ফলে ভি এফ এক্স অনেক সুন্দর করে দেখানো হয়েছে ।ব্লাস্টের পর আলাদা আলাদা গাড়ীর পার্টস জ্বলছে ,আকাশে কালো ধোয়া উরছে - এরকম করে দেখানোর ফলে ভি এফ এক্স অনেক হাইফাই এবং রিয়েলিস্টিক মনে হবে সবার কাছে ।
ছবির লোকেশন ছিলো অনেক ভালো ।অনেক বড় স্কেলে ছবি শুট করা হয়েছে ।কস্টিউম ,ড্রেস আপ ,ব্যাবহৃত সরঞ্জাম এসব অনেক ভালো ছিলো ।অরিজিনাল বোম্ব স্কোয়েডের পোশাক ,অরিজিনাল রাইফেল দিয়ে এই ছবি শুটিং করা হয়েছে । ছবিতে ট্যাঙ্ক ,পুলিশের গাড়ি সহ অরিজিনাল কিছু পুলিশ অফিসার ও অভিনয় করেছেন ।
সবশেষে দা ক্যাপ্টেন অফ দা শীপ দীপঙ্কর দীপন । একটা কথা বলি শিক্ষা র একটা আলাদা ভ্যালু আছে আলাদা সুবিধা আছে । দীপঙ্কর দীপন এই ছবিতে প্রতিটা সিনে তার শিক্ষার তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন ।ছবি দেখেই বুঝে যাবেন এই ছবি নিয়ে তিনি অনেক রিসার্চ অনেক পড়াশুনা করেছেন ।এক্ষেত্রে তার সাথে গল্পকার সানী সানোয়ার ও কৃতিত্বের দাবিদার ।তারা তাদের মধ্যে ছবির সকল ক্যারেক্টার কে নিয়ে নিয়েছিলেন । একজন টেরোরিস্ট কিভাবে চিন্তা করবে ? একজন বোম্ব স্কোয়াড কর্মী কিভাবে চিন্তা করবে ? একজন সাইকোপ্যাথ কিভাবে তার নৃশংসতা প্রকাশ করবে ? - এই সব কিছু এত নিখুত ভাবে কেউ করতে পারবে না যদি সে ক্যারেক্টার কে নিজের মধ্যে না নিয়ে ভাবে ।বোতল দিয়ে বোম্ব ডিসপোজ করা ,ঘড়ির টাইম বারিয়ে দেওয়া ,মাইন্ড গ্যাম ,বিভিন্ন এসিডের বিশ্লেষন ,রিমোট দিয়ে বোম্ব ডিএক্টিভেট করা এসব কিছু একজন শিক্ষিত পরিচালক আর লেখক ই দেখাতে পারেন ।ছবির শেষে একসাথে দশ হাজার পতাকা উওলন এর দৃশ্যটি সত্যিই অসাধারন ছিলো । দীপঙ্কর দীপন দা আপনাকে স্যালুট ।আপনি অনেক দূর যাবেন । আপনার কাছে প্রত্যাশার পারদ অনেক বেড়ে গেলো ।
এতক্ষন ধরে এত প্রশংসা করছি তাহলে কি এই ছবিতে কোনো ভুল নেই ।আছে তবে বড় বা দৃস্টিকটুর তেমন কোনো বড় ভুল নেই।আগেই বলেছি নওসাবা একটু বোর করবে । ছবির অনেক জায়গায় মাহির অধিক ম্যাকাপ বেখাপ্পা লাগবে ।সাংবাদিকরা এত সাজগোজ করেন বলে আমার মনে হয় না ।ছবির শুরুর দিকে একটি দৃশ্যে মাহি বলেছিলেন তার জীবনের চেয়ে সাংবাদিকতার মুল্য তার কাছে বেশি ,এর জন্য প্রয়োজন হলে তিনি জীবন দিয়ে দিবেন ।কিন্তু এই মাহি ই আবার শেষের দিকে তার প্রেমিক একজন পুলিশ কমকর্তা কে বোম্ব এর কাছে যেতে দিচ্ছেন না । শুভকে আটকিয়ে তার ন্যাকামি কান্না একটু দৃষ্টিকটুর লাগছিলো ।আরেকটা সিনে শহরের সব গাড়ি চুরদের ধরতে সোয়াট টিমকে পাটানো হচ্ছে ।চোর ধরতে সোয়াট টিম ! বাহ! তাও এমন ভাবে যেনো লাদেন কে এরেস্ট করত গেছে ।এই সিনটা হাস্যকর লেগেছে ।একাধিকবার "Kool" এর বিজ্ঞাপন দেখানো একটু দৃস্টিকটুর লাগছিলো । ক্লাইমেক্সে একটি হ্যালিকাপ্টার ওপর থেকে এসে ভিলেনকে গুলি করে চলে গেলো ভিলেন শব্দ শুনতে পেলো না। অথচ যখন গুলি করা হচ্ছিলো তখন দেখা যায় হ্যালিকাপ্টার টি ভিলেনের মাথার চেয়ে ১০-১২ ফুট উপরে অথচ ভিলেন এদিকে কথা বলছে ,সে জানে ই না যে তার মাথার ওপরে হ্যালিকাপ্টার চলে এসেছে ।এই সব ছোট খাটো ভুল টাইটানিক এ খুজলে ও হাজার পাওয়া যাবে ।তাই এগুলো ছবিকে তেমন ইফেক্ট করবে নাহ ।
সবশেষে বলতে চাই এটি একটি সুস্থ সুন্দর পরিপূর্ন বাংলাদেশী ছবি যেখানে আমাদের দেশকে অনেক সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে ।যেখানে দেখানো হয়েছে পুলিশ মানে শুধু থানায় আর ট্রাফিক এ বসে ঘুষ খাওয়া পুলিশ নয় ।পুলিশ বাহিনী র অনেক টিম কিভাবে ঝুকি নিয়ে দেশের সন্ত্রাস দমন করে । তারা নিজের স্ত্রী ,পরিবার ,ভালোবাসা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে কিভাবে দেশের সেবা করে তা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে এই ছবিতে দেখানো হয়েছে । দীপঙ্কর দীপন দা এবং তার টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই রকম একটি চলচিত্র দেওয়ার জন্য ।থ্রীল ,রোমান্স ,ইমোশন ,একশন ,স্টাইলিস্টের এক দুর্দান্ত প্যাকেজ ঢাকা এটাক । সাধারন দর্শকদের আবার হলে ফিরে এসেছে ,এই গরমে ও দর্শকের উপচেপড়া ভীড় ।দর্শক যে ভালো কন্টেন্ট গ্রহন করে তা আবার প্রমান হলো । সাধারন দর্শকদের জন্য রিলেজের দিনটি ছিলো ঈদের দিনের মতো ...ঈদের ছবিতে হয়তো ও এতবেশি দর্শক রেসপন্স মেলে না ।বাম্পার ওপেনিং দিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা এটাক এর যাত্রা । যারা দেখেন নি অবশ্যই দেখবেন খারাপ লাগবে না গ্যারান্টি ,সবাই হলে গিয়ে ছবি দেখুন ,এরকম ভালো ছবিকে সাপোর্ট করা খুব ধরকার । আশাকরি বাংলা ছবির এমন চিত্র অব্যহত থাকবে ।নতুন দের হাত ধরে এগিয়ে যাক আমাদের সিনেমা । এই ছবি দেখার পর আমি নিঃশন্দেহে বলতে পারি ,বাংলা ছবির সুদিন ফিরে আসছে ।
২০১২ সালে গল্প লেখা শুরু আর ২০১৭ সালে মুক্তি - ৫ বছরের পরিশ্রম একটি মাত্র ছবির জন্য । যেখানে ৫ বছরে আমাদের বাংলা ছবির পরিচালকেরা ১০ টা ছবি বানিয়ে ফেলেন । কিন্তু সেখানে দীপঙ্কর দীপন একটি চলচিত্র বানাতেই ৫ বছর লাগিয়ে দিলেন ,তার মানে এই ছবি অন্য সব ৫-১০ টা ছবির মতো হবে নাহ সেটা আগেই বুঝে গিয়েছিলাম । টিজার ,ট্রেইলার দেখে বুঝে গেলাম দারুন কিছু আসছে । তাই প্রথম দিনেই ছবিটা দেখা থেকে নিজেকে আটকাতে পারি নি ।একটু শুরু থেকে বিস্তারিত বলি -
৬ই অক্টোবর শুক্রবার ছবিটি সারা দেশব্যাপি ১২২ টি হলে মুক্তি পায় ঢাকা এটাক ।কিন্তু ঢাকা এটাক মুক্তির সাথে সাথে যেনো প্রকৃতি ও আমাদের ওপর এটাক করে বসলো । অসহ্য গরম আর সূর্যের তীব্র তাপদাহে ঘর থেকে যেনো বেড়োনো দায় ।কিন্তু তারপর প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে বেড়িয়ে পরলাম সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলের উদ্দেশ্য । ৬ টা ইয় শো তাই ৫ টার দিকে পৌছে গেলাম হলের সামনে ।গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ । এই গরমে এত মানুষ ! সিনেমা হলের সামনে তীল ধারনের জায়গা নেই ।আমি অনেক বছর যাবত নন্দিতা তে সিনেমা দেখি কিন্তু এত ভীড় আমি কখনো দেখি নি ইভেন ঈদে ও না ।টিকেট এর জন্য হলের সামনের রাস্তা পর্যন্ত ৪ টা লাইন ।অনেক কষ্টে টিকেট নিয়ে ঢূকে পরলাম হলের ভিতরে ।হলের ভিতর প্রবেশ করতেই আমার আফ্রিকা মহাদেশের গরমের ফিল পেলাম ।ছবি শুরু হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে যারা এসেছে তারা কাউন্টারে টিকেট পায় নি ,একজনকে জিজ্ঞেস করতে বললো ব্ল্যাকে ৪৫ টাকার টিকেট ১৫০ টাকা দিয়ে কিনে এসেছে ।ছবি শুরুর আগ মুহুর্তে একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখি ডিসি তে তীল ধারনের জায়গা টুকু ও নেই । সিট না পেয়ে অসংখ্য মানুষ ফ্লোরে বসে আছে আর গরমের কারনে সবাই শার্ট খুলে বসে গেছে । হাফ টাইমের হলের সবাই ঘামে একপ্রকার গোসল করে ফেলেছে ।কেউ কেউ শার্ট-প্যান্ট খুলে শুধু হাফ প্যান্ট পরে বসে ছবি দেখছে ।একটি বাংলা ছবির এত ক্রেজ ভাবতেই অবাক লাগে ।কি এমন আছে এই ছবিতে ?? তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ...
ঢাকা তে একসাথে অনেক গুলো খুন হচ্ছে এবং একটি স্কুল বাসে বোম্ব ব্লাস্ট হয় ।একের পর এক খুন আর বোমা হামলায় দেশের জনগন দিশেহারা এবং প্রশাসন প্রশ্নের মুখে ।পুলিশের দুইটি টিম বোম্ব স্কোয়াড এবং সোয়াট এর কয়েকজন অফিসারকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় ।শুরু হয় তদন্ত , কখনো ঢাকায় তো আবার কখনো চিটাগাঙ্গে আবার কখনো বান্দরবনে ।কে বা কারা আছে এইসব এর পিছে ,চাইছেই বা কি ? পুলিশ কি পারে ঢাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রান বাচিয়ে সে মাস্টারমাইন্ডকে ধরতে ? এইসব জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে ঢাকা এটাক । বোম্ব স্কোয়াডের লিডে আছেন আরেফিন শুভ এবং সোয়াট এর লিডে আছেন এবিএম সুমন ।তাদের সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ এবং আফজাল হোসেন । মাহিয়া মাহির চরিত্রটা একজন সাংবাদিক ।শুভ র সাথে মাহির রসায়ন টা ঠিক ততটুকো ই দেখানো হয়েছে যতটুকো রোমান্স একটি কপ থ্রীলার ফিল্মে দেখানো উচিত ।এ বিএম সুমনের স্ত্রীর চরিত্রে নওসাবা মোটামোটি ভালোই করেছেন ।ক্যামিও চরিত্রে আছেন আলমগীর স্যার এবং শিপন মিত্র ।
প্রথমেই আসি ছবির গল্পে ।ছবির গল্প আহামারি পেছানো কিছু না ।একটি সিম্পল স্টোরি কিন্তু তার ব্যাতিক্রম উপস্থাপন ।যেভাবে ডিরেক্টর গল্পটাকে প্রজেন্ট করেছেন তার জন্য ডিরেক্টর প্রশংসার দাবিদার ।একটি সিম্পল গল্পকে টূইস্ট-টার্ন ,থ্রীল ,একশন ,ইমোশন ,হালকা রোমান্স ,দেশপ্রেম ইত্যাদি দিয়ে যেভাবে প্রজেন্ট করা হয়েছে তাতে দর্শক এক সেকেন্ড পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবে না ।গল্পটাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেনো মাস এবং ক্লাস দুইশ্রেনীর দর্শকের এই ছবি ভালো লাগে। এরজন্য গল্পকার ,চিত্রনাট্যকার ,ডায়লগ রাইটার অবশ্যই বাহবা পাওয়ার যোগ্য ।
এবার আসি আর্টিস্টদের অভিনয়ের দিকে । প্রথমেই আরেফিন শুভর কথা বলতে হয় ।ছেলেটা দিন দিন নিজেকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাচ্ছে । যারা বলেন আরেফিন শুভ অভারএক্টিং করে তারা প্লিজ হলে গিয়ে ছবিটা দেখে আসবেন ।ছবি দেখার পর শুভ কে নিয়ে আপনার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না । শুভকে দেখে একবার ও মনে হয়নি সে পুলিশ এর অভিনয় করছে ।তার কথাবার্তা ,হাটাচলা ,ফিগার ,বন্দুক ধরা ,চোখের চাহনী থেকে শুরু করে চুলের কাট কিংবা গোফ রাখা পর্যন্ত সবকিছু একদম পারফেক্ট ।যেনো একজন বাস্তবিক পুলিশ অফিসার ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্দায় ।হাসপাতালের দৃশ্যে বোম্ব ডিফিউজ করার পর শুভ র চোখের চাহনী আর মুখের এক্সপ্রশন আপনার শরীরের লোম খাড়া করে দেবে গ্যারান্টি । সারা ছবিতে এমনকি গানের দৃশ্যে ও ছবির সেইম লুক যা সচরাচর বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না । আমাদের দেশের নায়কদের ছবির এক দৃশ্য লম্বা চুল থাকে তো পরের দৃশ্যে চুল ছোট । ছবিতে দাড়ি ছাড়া আবার গানের মধ্যে দাড়িসহ ।তবে শুভ এরকম করেন নি ,ছবির জন্য নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন ।একটি ছবির জন্য তার এই ডেডীকেশন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার । এরজন্য শুভ পাবেন ১০ এ ৯ ।
মাহিয়া মাহি সাংবাদিক চরিত্রে মানিয়ে গেছেন ।মাহি এর আগে ও অনেকবার সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাই এই চরিত্র টি তার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে গেছে ।ছবিতে অনেক কিউট লেগেছে থাকে তবে টুপ টাপ গানের মধ্যে মাহিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো ।শেষের দিকে ইমোশনাল সিনে একটু অভার এক্টিং না করলে শুভর মতো তিনি ও ফুল মার্ক পেতেন । মাহি পাবেন ১০ এ ৭।
সোয়াট এর অফিসারের রোলে এ বি এম সুমন পার্ফেক্ট ছিলেন ।তার ফিজিক্স লেভেল ,কথাবার্তা ,হাঠাচলা ,এক্সপ্রেশন দেখে তাকে ও সত্যিকারের পুলিশ মনে হয়েছে ।তার চেহারা আর ফিগার মাশাল্লাহ ,এরকম পুলিশ অফিসার বাস্তবে হলে সব সুন্দরী মেয়েরা আসামী হয়ে যাবে ।বাই দা ওয়ে অভিনয়ে আরো উন্নতি করতে পারলে তার ফিউচার ব্রাইট । সুমন পাবেন ১০ এ ৭.৫ ।
একজন সোয়াট অফিসারের প্রগনেন্ট স্ত্রীর চরিত্রে কাজী নওসাবা ভালো ই ছিলেন ।তবে তার চরিত্র অনুযায়ি তাকে স্ক্রীন টাইম বেশি দেওয়া হয়ছে । টান টান উত্তেজনার মধ্যে বারবার প্রেগনেন্ট মহিলাকে দেখানো একটু বোর করে দর্শকদের । নওসাবা পাবেন ১০ এ ৬ ।
এই মিশনের হেড হিসেবে শতাব্দী ওয়াদুদ দারুন করেছেন ।তার কথাবার্তা ,এক্সপ্রেশন গুলো দারুন ছিলো ।কখনো টেনশনে থাকার এক্সপ্রেশন আবার কখনো রাগান্বিত এক্সপ্রেশন ।সকিছুই নিখুত ভাবে করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ ।তিনি পাবেন ১০ এ ৯ ।
সবশেষে Last But Not The Least তাসকিন রহমান ।ঢাকা এটাক এর স্টার পারফর্মার । তার পারফরমেন্স এককথায় বলবো আউটস্টেন্ডিং ।অনেক দিন পর বাংলা চলচিত্র একজন স্টাইলিস্ট ভিলেন পেলো । কি এক্সপ্রেশন ,কি ডায়লগ ডেলিভারী ,কি লুক জাস্ট ওয়াও ।ডিরেক্টর সাহেব কে সংখ্য ধন্যবাদ এরকম একজন ট্যালেন্ট কে হাইলাইটস করার জন্য ।চিৎকার চেচামেচি আর কুত্তার বাচ্চা ,শুয়োরের বাচ্চা না বলে শুধু অভিনয় আর এক্সপ্রেশন দিয়ে যে কতটা ভয়ানক ভিলেনিজম দেখানো যায় তা তাসকীন রহমান দেখিয়ে দিলেন ।ছেলেটাকে যদি ডিরেক্টর রা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সে অনেক দূর যাবে ।তার এই ক্যারেক্টার কে অনেক দিন মনে রাখবে মানুষ । বাজিমাত করে দিয়েছে এই ছবিতেই ।তিনি পাবেন ১০ এ ৯ ।
আর বাকি যারা আছেন ছোট ছোট ক্যারেক্টারে তারা সবাই ভালো করেছেন ।আলমগীর স্যার এবং শীপন এর ক্যামিও চরিত্র ও অনেক ভালো হয়েছে ।সবার কাছ থেকে তাদের সেরাটা বের করে নিয়েছেন ডিরেক্টর সাহেব ।
ছবির মিউজিক ভালো ছিলো ।টুপ টাপ ভালো ছিলো আরো ভালো হতে পারতো যেহেতু অরিজিৎ সিং কে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছেন ।তবে দর্শকের সবচেয়ে পছন্দের গান টিকাটুলি ।এই গানের নতুন ভার্সন প্লাস দারুন ভিডিও তে হলের সবাই নাচবে। কারন মাস অডিয়েন্সের এই ধরনের ফান সং দারুন লাগে ।স্কুলের বাচ্চাদের জন্য একটি গান ছিলো এবং শেষের দিকে একটি রোমান্টিক স্যাড সং ছিলো যা অনেক ভালো ছিলো । তবে সবচেয়ে ভালো ছিলো এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ।বাংলা ছবিতে এধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর আগে কখনো হয়েছে বলে আমার মনে হয় নি ।থ্রীলার সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট ।প্রতিটা সিনকে আরো সুন্দর করে তুলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ।এরকম ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর জন্য টিমকে সাধুবাদ ।
এবার আসি সিনেমাট্রোগ্রাফি তে ।আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি বাংলা ছবিতে এরকম সিনেমাট্রোগ্রাফি এর আগে কখনো হয় নি ।ক্যামেরা কাজ ছিলো দেখার মতো ।৫ জন সিনেমাট্রোগ্রাফার কাজ করেছেন এই ছবিতে ।বান্দরবন অংশে ,বিদেশের অংশে কিংবা গাড়ির রেসিং এ ক্যামেরার কাজ ছিলো জাস্ট ওয়াও ।দেখেই মনে হয়েছে প্রতিটা সিনকে অনেক যত্ন করে সময় নিয়ে ধারন করা হয়েছে ।এত বড় পরিসরে ক্যামেরা ওয়ার্ক এর জন্য টিমকে সাধুবাদ জানাই ।
ভি এফ এক্স এর কাজ অনেক ভালো ছিলো ।সচরাচর বাংলা ছবির ভি এফ এক্স থেকে অনেক উন্নত ।এখানে ভি এফ এক্স টিমকে এবং ডিরেক্টর কে ধন্যবাদ জানাই তারা ব্লাস্টের সিন গুলোকে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য ।ভি এফ এক্স কিন্তু খুব বেশি দামি কিংবা হাইফাই ছিলো না তারপরেও ডিরেক্টর এর বুদ্ধিমত্তার ফলে ভি এফ এক্স অনেক সুন্দর করে দেখানো হয়েছে ।ব্লাস্টের পর আলাদা আলাদা গাড়ীর পার্টস জ্বলছে ,আকাশে কালো ধোয়া উরছে - এরকম করে দেখানোর ফলে ভি এফ এক্স অনেক হাইফাই এবং রিয়েলিস্টিক মনে হবে সবার কাছে ।
ছবির লোকেশন ছিলো অনেক ভালো ।অনেক বড় স্কেলে ছবি শুট করা হয়েছে ।কস্টিউম ,ড্রেস আপ ,ব্যাবহৃত সরঞ্জাম এসব অনেক ভালো ছিলো ।অরিজিনাল বোম্ব স্কোয়েডের পোশাক ,অরিজিনাল রাইফেল দিয়ে এই ছবি শুটিং করা হয়েছে । ছবিতে ট্যাঙ্ক ,পুলিশের গাড়ি সহ অরিজিনাল কিছু পুলিশ অফিসার ও অভিনয় করেছেন ।
সবশেষে দা ক্যাপ্টেন অফ দা শীপ দীপঙ্কর দীপন । একটা কথা বলি শিক্ষা র একটা আলাদা ভ্যালু আছে আলাদা সুবিধা আছে । দীপঙ্কর দীপন এই ছবিতে প্রতিটা সিনে তার শিক্ষার তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন ।ছবি দেখেই বুঝে যাবেন এই ছবি নিয়ে তিনি অনেক রিসার্চ অনেক পড়াশুনা করেছেন ।এক্ষেত্রে তার সাথে গল্পকার সানী সানোয়ার ও কৃতিত্বের দাবিদার ।তারা তাদের মধ্যে ছবির সকল ক্যারেক্টার কে নিয়ে নিয়েছিলেন । একজন টেরোরিস্ট কিভাবে চিন্তা করবে ? একজন বোম্ব স্কোয়াড কর্মী কিভাবে চিন্তা করবে ? একজন সাইকোপ্যাথ কিভাবে তার নৃশংসতা প্রকাশ করবে ? - এই সব কিছু এত নিখুত ভাবে কেউ করতে পারবে না যদি সে ক্যারেক্টার কে নিজের মধ্যে না নিয়ে ভাবে ।বোতল দিয়ে বোম্ব ডিসপোজ করা ,ঘড়ির টাইম বারিয়ে দেওয়া ,মাইন্ড গ্যাম ,বিভিন্ন এসিডের বিশ্লেষন ,রিমোট দিয়ে বোম্ব ডিএক্টিভেট করা এসব কিছু একজন শিক্ষিত পরিচালক আর লেখক ই দেখাতে পারেন ।ছবির শেষে একসাথে দশ হাজার পতাকা উওলন এর দৃশ্যটি সত্যিই অসাধারন ছিলো । দীপঙ্কর দীপন দা আপনাকে স্যালুট ।আপনি অনেক দূর যাবেন । আপনার কাছে প্রত্যাশার পারদ অনেক বেড়ে গেলো ।
এতক্ষন ধরে এত প্রশংসা করছি তাহলে কি এই ছবিতে কোনো ভুল নেই ।আছে তবে বড় বা দৃস্টিকটুর তেমন কোনো বড় ভুল নেই।আগেই বলেছি নওসাবা একটু বোর করবে । ছবির অনেক জায়গায় মাহির অধিক ম্যাকাপ বেখাপ্পা লাগবে ।সাংবাদিকরা এত সাজগোজ করেন বলে আমার মনে হয় না ।ছবির শুরুর দিকে একটি দৃশ্যে মাহি বলেছিলেন তার জীবনের চেয়ে সাংবাদিকতার মুল্য তার কাছে বেশি ,এর জন্য প্রয়োজন হলে তিনি জীবন দিয়ে দিবেন ।কিন্তু এই মাহি ই আবার শেষের দিকে তার প্রেমিক একজন পুলিশ কমকর্তা কে বোম্ব এর কাছে যেতে দিচ্ছেন না । শুভকে আটকিয়ে তার ন্যাকামি কান্না একটু দৃষ্টিকটুর লাগছিলো ।আরেকটা সিনে শহরের সব গাড়ি চুরদের ধরতে সোয়াট টিমকে পাটানো হচ্ছে ।চোর ধরতে সোয়াট টিম ! বাহ! তাও এমন ভাবে যেনো লাদেন কে এরেস্ট করত গেছে ।এই সিনটা হাস্যকর লেগেছে ।একাধিকবার "Kool" এর বিজ্ঞাপন দেখানো একটু দৃস্টিকটুর লাগছিলো । ক্লাইমেক্সে একটি হ্যালিকাপ্টার ওপর থেকে এসে ভিলেনকে গুলি করে চলে গেলো ভিলেন শব্দ শুনতে পেলো না। অথচ যখন গুলি করা হচ্ছিলো তখন দেখা যায় হ্যালিকাপ্টার টি ভিলেনের মাথার চেয়ে ১০-১২ ফুট উপরে অথচ ভিলেন এদিকে কথা বলছে ,সে জানে ই না যে তার মাথার ওপরে হ্যালিকাপ্টার চলে এসেছে ।এই সব ছোট খাটো ভুল টাইটানিক এ খুজলে ও হাজার পাওয়া যাবে ।তাই এগুলো ছবিকে তেমন ইফেক্ট করবে নাহ ।
সবশেষে বলতে চাই এটি একটি সুস্থ সুন্দর পরিপূর্ন বাংলাদেশী ছবি যেখানে আমাদের দেশকে অনেক সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে ।যেখানে দেখানো হয়েছে পুলিশ মানে শুধু থানায় আর ট্রাফিক এ বসে ঘুষ খাওয়া পুলিশ নয় ।পুলিশ বাহিনী র অনেক টিম কিভাবে ঝুকি নিয়ে দেশের সন্ত্রাস দমন করে । তারা নিজের স্ত্রী ,পরিবার ,ভালোবাসা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে কিভাবে দেশের সেবা করে তা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে এই ছবিতে দেখানো হয়েছে । দীপঙ্কর দীপন দা এবং তার টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই রকম একটি চলচিত্র দেওয়ার জন্য ।থ্রীল ,রোমান্স ,ইমোশন ,একশন ,স্টাইলিস্টের এক দুর্দান্ত প্যাকেজ ঢাকা এটাক । সাধারন দর্শকদের আবার হলে ফিরে এসেছে ,এই গরমে ও দর্শকের উপচেপড়া ভীড় ।দর্শক যে ভালো কন্টেন্ট গ্রহন করে তা আবার প্রমান হলো । সাধারন দর্শকদের জন্য রিলেজের দিনটি ছিলো ঈদের দিনের মতো ...ঈদের ছবিতে হয়তো ও এতবেশি দর্শক রেসপন্স মেলে না ।বাম্পার ওপেনিং দিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা এটাক এর যাত্রা । যারা দেখেন নি অবশ্যই দেখবেন খারাপ লাগবে না গ্যারান্টি ,সবাই হলে গিয়ে ছবি দেখুন ,এরকম ভালো ছবিকে সাপোর্ট করা খুব ধরকার । আশাকরি বাংলা ছবির এমন চিত্র অব্যহত থাকবে ।নতুন দের হাত ধরে এগিয়ে যাক আমাদের সিনেমা । এই ছবি দেখার পর আমি নিঃশন্দেহে বলতে পারি ,বাংলা ছবির সুদিন ফিরে আসছে ।

আপনার সাইটের পোস্ট লেখার অনুমান খুবই ভাল ।নিবন্ধ লেখার সময় আপনি যে সহজ ভাষায় ব্যবহার করেন সেটি প্রশংসা করা হয়। আপনি যা তথ্য দিয়েছেন তা আমার কাছে অনেক মূল্যবান হবে, আমি আশা করি। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আপনি মহান নিবন্ধ লিখতে চান। এই নিবন্ধটি ভাগ করার জন্য ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন